গণিত (পিকে) Archives - Proshikkhon

Category "গণিত (পিকে)"

7Jul2020

অধ্যায়-০৮: পাঠ পরিকল্পনা

পাঠ-৮.১: পাঠ পরিকল্পনা: পাঠ পরিকল্পনা কী ও এর গুরুত্ব, বিবেচ্য বিষয় ও ধাপসমূহ

ক্লাসের আলোচ্য বিষয়:

১) পাঠ পরিকল্পনা বলতে কী বোঝেন?

২) গণিত পাঠ পরিকল্পনার গুরুত্ব ও বিবেচ্য বিষয়গুলো আলোচনা করুন।

৩) গণিত পাঠ পরিকল্পনার ধাপসমূহের বর্ণনা দিন।

৪। গণিত বিষয়ে ৫ম শ্রেণির ‘ভগ্নাংশের গুণ’ সম্পর্কিত একটি পাঠ-পরিকল্পনা তৈরি করুন।

১) পাঠ পরিকল্পনা বলতে কী বোঝেন?

পাঠ পরিকল্পনা হলো কোন কোন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠ দেওয়ার পূর্বে পাঠটি সম্পর্কে লিখিত দলিল। শ্রেণিকক্ষে পাঠ উপস্থাপনের পূর্বে পাঠটিতে কী পদ্ধতি বা কৌশল ব্যবহার করা হবে, কোন ধরণের উপকরণ ব্যবহার করা হবে, কত সময় ধরে কোন কোন অ্যাক্টিভিটি পরিচালনা করা হবে  এবং কীভাবে করা হবে তার একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা।

[…]
7Jul2020

অধ্যায়-০৭: গণিত শিখন মূল্যায়ন

পাঠ-৭.৪: গণিত শিখন ঘাটতি সনাক্তকরণ ও নিরাময়মূলক ব্যবস্থা

ক্লাসের আলোচ্য বিষয়:

১. কীভাবে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি চিহ্নিত করা যায় তা ব্যাখ্যা করুন।

২. শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতির কারণসমূহ উল্লেখ করুন।

৩. অপারগ শিক্ষার্থী শনাক্তকরণ কৌশল ব্যাখ্যা করুন।

৪. নিরাময়মূলক ব্যবস্থা বলতে কী বুঝায়?

৫. নিরাময়মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যামে কীভাবে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি দূর করা যায় তা ব্যাখ্যা করুন।

১. কীভাবে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি চিহ্নিত করা যায় তা ব্যাখ্যা করুন।

শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি চিহ্নিতকরণ

শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটটি চিহ্নিত করা মূল্যায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা দৈনন্দিন পাঠদান কার্যক্রমে মূল্যায়ন একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।  পাঠ চলাকালিন ও পাঠ শেষে আলোচিত বিষয়বস্তুর উপর শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি পরিমাপ করা পাঠেরই একটি অঙ্গ যা কেবলমাত্র মূল্যায়নের মাধ্যমেই সম্ভব। আর প্রতিটি পাঠের শিক্ষার্থীর এই অগ্রগতি পরিমাপকে বলা হয় ধারাবাহিক মূল্যায়ন।

মূলত শিক্ষার্থীদের শিখন চিহ্নিত করে নিরাময়মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুরোপুরি শিখন নিশ্চিত করাই শিখন ঘাটতি চিহ্নিত করার মূল উদ্দেশ্য। নিম্নে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি চিহ্নিত করার কৌশল ব্যাখ্যা করা হলো:

  • পাঠ চলাকালিন শিখন ঘাটতি চিহ্নিত করতে হয়, যাতে পাঠ শেষের আগেই ঘাটতি পূরণ করা যায়।
  • মূল্যায়ন করার আগে শিক্ষার্থীদের জানানো হয় না ফলে শিক্ষার্থীদের মনে পরীক্ষা ভীতি তৈরি হয় না।
  • কোনো একটি নির্দিষ্ট যোগ্যতার শিখন-শেখানো কার্যক্রম চলার সময় এবং শেষে ঐ যোগ্যতার উপর মূল্যায়ন করে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করা হয় এবং তাদের পিছিয়ে পড়ার কারণ খুঁজে বের করা হয়।
  • কাঙ্খিত যোগ্যতা অর্জন করতে না পারার কারণ অথবা পিছিয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধান করে পুনরায় বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাময়ের ব্যবস্থা করা হয় যা নিরাময়মূলক ব্যবস্থা নামে পরিচিত। শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সকল শিক্ষার্থীর দুর্বলতা বা শিখন ঘাটতি সবসময় একরকম হয় না এবং একই কৌশল অবলম্বন করে তা দুর করাও সম্ভব হয় না। ফলে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে ঘাটতি দূর করার ব্যবস্থা করা হয়।

২. শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতির কারণসমূহ উল্লেখ করুন।

শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতির কারণ:

  • শ্রেণি কার্যক্রমে নিয়মিত উপস্থিত না থাকলে,
  • পাঠের প্রতি অমনোযোগি থাকলে,
  • আগ্রহ ও আস্থার অভাব থাকলে,
  • পূর্ব প্রস্তুতির ঘাটতি থাকলে,
  • শিক্ষার্থীদের মেধায় ঘাটতি থাকলে,
  • পাঠদান পদ্ধতি আকর্ষনীয় না হলে,
  • সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু পর্যাপ্ত অনুশীলন না করার ফলে,
  • সকল শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকের মনোযোগের ঘাটতি থাকলে,
  • শিক্ষার্থী সম্পর্কে শিক্ষকের সুস্পষ্ট ধারণা না থাকলে।

৩. অপারগ শিক্ষার্থী শনাক্তকরণ কৌশল ব্যাখ্যা করুন।

অপারগ শিক্ষার্থী শনাক্তকরণ:

নিয়মিত শিখন-শেখানো কার্যক্রম চলাকালিন এবং শেষে কোনো একটি নির্দিষ্ট যোগ্যতা শিক্ষার্থীরা অর্জনে করতে পারছে কি না তা যাচাই করে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করতে হয়। অপারগ শিক্ষার্থী নিম্নোক্ত কৌশল অবলম্বন করে শনাক্ত করা যেতে পারে। তা হলো:

  • সর্বপ্রথম শিক্ষার্থীদের ঘাটতির ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে হবে। যেমন, কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ঘাটতি রয়েছে। যেমন- সংখ্যা চেনা, গণনা করা, নামতা না জানা ইত্যাদি।
  • সুবিধামতো সময়ে শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে হবে। সাক্ষাৎকারের সময় শিক্ষার্থীকে তার নিজের অসুবিধা বা সমস্যার কথা বলতে উৎসাহিত করতে হবে।
  • শিখন ঘাটতি থাকলেও সমালোচনা না করে তার ভাল দিকগুলোর প্রশংসা করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হবে।
  • সর্বদা বন্ধুত্বসূলভ পরিবেশ সৃষ্টি করা যাতে যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যার কথা সহজে শিক্ষককে জানাতে পারে।
  • শিক্ষার্থী যাই বলুক তাকে ইতিবাচকভাবে নিতে হবে যাতে গঠনমূলক আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

৪. নিরাময়মূলক ব্যবস্থা বলতে কী বুঝায়?

নিরাময়মূলক ব্যবস্থা:

কাঙ্খিত যোগ্যতা অর্জন করতে না পারার কারণ অথবা পিছিয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধান করে পুনরায় বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাময়ের ব্যবস্থা করাকে নিরাময়মূলক ব্যবস্থা বলা হয়। সকল শিক্ষার্থীর দুর্বলতা বা শিখন ঘাটতি সবসময় একরকম হয় না এবং একই কৌশল অবলম্বন করে তা দুর করাও সম্ভব হয় না। শিক্ষার্থীর শিখন ক্ষমতা বিবেচনা করে বিভিন্ন কৌশল ও প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যবহার করে সহযোগিতা প্রদানসহ প্রয়োজনীয় অনুশীলনের ব্যবস্থার করা নিরাময়মূলক ব্যবস্থার অন্যতম উদ্দেশ্য।

৫. নিরাময়মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যামে কীভাবে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি দূর করা যায় তা ব্যাখ্যা করুন।

নিম্নে নিরাময়মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যামে কীভাবে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি দূর করা যায় তা ব্যাখ্যা করা হলো:

  • শিক্ষার্থীর ভিন্নতার কারণে তাদের দুর্বলতা বা শিখন ঘাটতিও সবসময় একরকম হয় না এবং একই কৌশল অবলম্বন করে তা দুর করাও সম্ভব হয় না। সুতরাং শিক্ষার্থীর শিখন ঘাটতি অনুসারে শিখন কৌশলও পরিবর্তন করতে হবে যাতে ঘাটতি পূরণ করা যায়।
  • শিক্ষার্থীর শিখন ক্ষমতায়ও পার্থক্য রয়েছে। তাদের গ্রহণ ক্ষমতা বিবেচনা করে বিভিন্ন কৌশল ও প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যবহার করে সহযোগিতা প্রদানসহ প্রয়োজনীয় অনুশীলনের ব্যবস্থার করা নিরাময়মূলক ব্যবস্থা করা যায়।
  • শিখন ঘাটতির কারণ অনুযায়ী সহযোগিতা প্রদান করা এবং অনুশীলন করানো।
  • শিক্ষকের আন্তরিকতা ও ব্যাক্তিগত সহযোগিতা প্রদান অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই শিক্ষককে প্রতিটি যোগ্যতা অর্জনে প্রতিটি শিশুর প্রতি সহযোগি মনোভাবাপন্ন হতে হবে।
  • পারগ শিক্ষার্থীর সাহায্যে অপারগ শিক্ষার্থীকে শিখানোর ব্যবস্থা করতে পারেন। তবে শিক্ষককে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন পারগ শিক্ষার্থী অপারগ শিক্ষার্থীর উপর প্রভাব বিস্তার না করে।
  • আন্তরিক পরিবেশে শিশুকে না জানিয়ে নিরাময়মূলক ব্যবস্থা করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীদের মনে কোনভাবেই ভীতি সঞ্চার না হয়।
5Jul2020

অধ্যায়-০৭: গণিত শিখন মূল্যায়ন

পাঠ-৭.৩: ধারাবাহিক ও সামষ্টিক মূল্যায়নে ব্যবহৃত অভীক্ষাপদ প্রণয়ন

ক্লাসের আলোচ্য বিষয়:

১. কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষাপদ কত প্রকার ও কী কী?

২. নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষাপদ কী? নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষাপদের প্রকারভেদ বর্ণনা করুন।

৩. বহু নির্বাচনী অভীক্ষাপদের অংশ কয়টি ও কী কী? এর বৈশিষ্ট্যগুলো লিখুন।

৪. গণিত বিষয় মূল্যায়নে রুব্রিকের ব্যবহার ব্যাখ্যা করুন।

৫. মূল্যায়নকারীগণের জন্য রুব্রিকের মাধ্যমে মূল্যায়নের সাধারণ নির্দেশনাসমূহ উল্লেখ করুন।

১. কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষাপদ কত প্রকার ও কী কী?

কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষা:

কাঠামোবদ্ধ অভীক্ষা সাধারণত ২ প্রকার। যথা:

১. সংক্ষিপ্ত-উত্তর অভীক্ষা এবং

২. দীর্ঘ-উত্তর অভীক্ষা।

১. সংক্ষিপ্ত-উত্তর অভীক্ষা:

যে অভীক্ষায় এমনভাবে প্রশ্ন করা হয় যাতে উত্তর দিতে হয় সংক্ষেপে দেওয়া যায়, তাকে সংক্ষিপ্ত-উত্তর অভীক্ষা পদ বলা হয়। এ ধরণের অভীক্ষাপদে উত্তর লেখার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর স্বাধীনতা তুলনামূলক কম থাকে।

২. দীর্ঘ-উত্তর অভীক্ষা:

যে অভীক্ষায় এমনভাবে প্রশ্ন করা হয় যাতে উত্তর দিতে হয় বিস্তৃত আকারে, তাকে দীর্ঘ-উত্তর অভীক্ষাপদ বলা হয়। এ ধরণের অভীক্ষাপদের জন্য সময় ও নম্বর উভয়ই বেশি দেয়া হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা উত্তর প্রদানের জন্য অপেক্ষোকৃত বেশি স্বাধীনতা পেয়ে থাকে। দীর্ঘ-উত্তর অভীক্ষায় বিভিন্ন ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, পার্থক্য, বর্ণনা জাতীয় প্রশ্ন করা হয়ে থাকে।

২. নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষাপদ কী? নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষাপদের প্রকারভেদ বর্ণনা করুন।

নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষাপদ:

যে সব অভীক্ষাপদ বা প্রশ্নে শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত প্রভাব রাখার সূযোগ থাকে না, তাকে নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষাপদ বলা হয়। অভীক্ষার নৈর্ব্যক্তিকতা বজায় থাকে বলেই নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষাপদ বলা হয়। নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষাপদের নির্ভরযোগ্যতা ও যথার্থতা উভয়ই রক্ষিত হয়। সে কারণে গতানুগতিক রচনামূলক প্রশ্নের অসুবিধাগুলো দূর করার উদ্দেশ্যেই মূলত নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার প্রচলন শুরু হয়েছে।

নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার প্রকারভেদ:

নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষাপদ সাধারণত: ৫ ধরণের পরিলক্ষিত হয়। যথা:

১. সংক্ষিপ্ত উত্তর (Short Answer Type Item)

২. শূন্যস্থান পূরণ (Fill-in-the-Blank Type)

৩. সত্য-মিথ্যা নির্ণয় (True -False)

৪. মিলকরণ (Matching Type)

৫. বহু নির্বাচনী (Multiple Choice Item)।

(ক) সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন:

সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্নের উত্তর শিক্ষার্থীকে সরবরাহ করা হয় যেখানে উত্তরটি খুবই সংক্ষিপ্ত ও সুনির্দিষ্ট হয়। প্রতিটি প্রশ্নের সাথে উত্তরের জন্য জায়গা নির্দেশ করা থাকে। অথবা কোথায় উত্তর লিখতে হবে সে সম্পর্কেও নির্দেশনা দেয়া থাকে।

উদাহরণ: ১২ এর গুণনীয়ক কয়টি? উত্তর: ——-

(খ) শূন্যস্থান পূরণ অভীক্ষাপদ:

শূন্যস্থান পূরণ জাতীয় অভীক্ষাপদে শিক্ষার্থীকে উত্তর সরবরাহ করতে হয়। একটি অর্থপূর্ণ গাণিতিক বাক্য থেকে এক বা একাধিক সংখ্যা/শব্দ তুলে নেওয়া হয় এবং শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত সংখ্যা/শব্দ ব্যবহার করে বাক্যটি পুর্ণ করতে বলা হয়।

উদাহরণ: উপযুক্ত শব্দ বসিয়ে শূন্যস্থান পূরণ কর-

১. যে সকল পূর্ণ সংখ্যার দুইয়ের অধিক মৌলিক গুণনীয়ক রয়েছে তাদেরকে ———– সংখ্যা বলে।

(গ) সত্য-মিথ্যা নির্ণয় অভীক্ষাপদ:

সত্য-মিথ্যা নির্ণয় প্রশ্নে শিক্ষার্থীকে অর্থপূর্ণ সম্পূর্ণ বাক্য বা প্রদত্ত বিবৃতির প্রকৃতি (সত্য-মিথ্যা) নির্ধারণ করতে বলা হয়। এ ধরনের অভীক্ষাপদ দ্বারাও শিক্ষার্থীর জ্ঞানের পরিমাপ করা হয়।

উদাহরণ: বাক্য সত্য হলে ‘স’ মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখ।

১. চতুর্ভুজের চারটি কোণের সমষ্টি তিন সমকোণের সমান।

(ঘ) মিলকরণ:

এ ধরনের অভীক্ষাপদে দুটি কলাম থাকে। প্রথম কলামে থাকে কোন বিবৃতি বা প্রশ্ন। দ্বিতীয় কলামে থাকে বিবৃতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ধারণা বা প্রশ্নের উত্তর প্রথম সারিতে ক্রম অনুযায়ী যে ভাবে বিবৃতি বা প্রশ্নে উপস্থাপন করা হয় দ্বিতীয় সারিতে ধারণা বা উত্তরগুলো ঠিক সেভাবে উপস্থাপন করা হয় না।

উদাহরণ: বাম পাশের সারির প্রশ্নের সাথে ডান পাশের সারির সংখ্যার মিল কর।

বাম ডান
ক. ঘনকের কয়টি পৃষ্টতল রয়েছে?
খ. ঘনকের কয়টি ধার বা কিনার রয়েছে?
গ. ঘনকের কয়টি শীর্ষবিন্দু রয়েছে?  
ক. ৪টি
খ. ৮টি
গ. ৬টি
ঘ. ১০টি
ঙ. ১২টি

(ঙ) বহু নির্বাচনী অভীক্ষাপদ:

নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষাপদ বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত হয়। কারণ বহু নির্বাচনী অভীক্ষাপদ অন্য যে কোন প্রকার নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষাপদের তুলনায় অধিক নির্ভরযোগ্য। এ ছাড়া জ্ঞানের বিভিন্ন স্তরের অর্থাৎ জ্ঞান, উপলব্ধি, প্রয়োগ ইত্যাদির উপযোগী বহু নির্বাচনী অভীক্ষাপদ তৈরি করা যায়। যেমন-

উদাহরণ: ১. ঘনকের কয়টি পৃষ্টতল রয়েছে?

ক. ৪ টি

খ. ৫ টি

গ. ৬ টি

ঘ. ৭ টি

৩. বহু নির্বাচনী অভীক্ষাপদের অংশ কয়টি ও কী কী? এর বৈশিষ্ট্যগুলো লিখুন।

বহু নির্বাচনী প্রশ্নের প্রধানত দুটি অংশ থাকে। যথা:

১. মূল অংশে (STEM) থাকে একটি প্রশ্ন বা সমস্যা এবং

২. স্টেম এর নিচে ৪/৫টি বিকল্প উত্তর (Alternatives or options) দেওয়া থাকে। এই বিকল্প উত্তরগুলোর মধ্যে একটি মাত্র উত্তর সঠিক (Key) এবং বাকিগুলো ভুল উত্তর বা বিচলক (Distracter)।

উদাহরণ:

বহু নির্বাচনী অভীক্ষাপদের বৈশিষ্ট্য:

  • স্টেম সরাসরি প্রশ্ন আকারে হবে অথবা একটি সম্পূর্ণ বাক্য বা উক্তি হতে পারে।
  • Key -এর মাধ্যমে সঠিক উত্তরটি নিশ্চিত করতে হয়।
  • সব বিকল্প উত্তর একই কাঠামোর হতে হবে। (যেমন- বাক্য, শব্দগুচ্ছ সব একই দৈর্ঘ্যের হতে হবে)।
  • বিকল্প উত্তরগুলো সমগোত্রীয় হতে হয়।
  • উত্তরগুলো যৌক্তিকভাবে সাজাতে হয়।
  • উত্তরগুলো প্রশ্নের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হয়।
  • না বাচক বাক্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হয়।
  • প্রশ্নের উত্তর খোঁজার ক্ষেত্রে কোন সূত্র রাখা যায় না।
  • প্রশ্নের মধ্যে শুদ্ধ উত্তরগুলোর অবস্থান ভিন্ন হতে হয় যাতে কোন প্যাটার্ন খুঁজে পাওয়া না যায়।
  • প্রশ্নগুলো যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত হতে হয়।
  • দ্ব্যর্থবোধক বা চালাকি প্রশ্ন না করাই ভালো।

৪. গণিত বিষয় মূল্যায়নে রুব্রিকের ব্যবহার ব্যাখ্যা করুন।

গণিত বিষয় মূল্যায়নে রুব্রিকের ব্যবহার:

শিক্ষার্থীদের নম্বর প্রদানে ক্ষেত্রে নৈর্ব্যক্তিকতা ও নির্ভরযোগ্যতা বজায় রাখার জন্য রুব্রিক অত্যন্ত কার্যকরি একটি উপায়। শিখন-শেখানো কার্যক্রম ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় ও উপাদানের মূল্যায়ন ও তা উন্নয়নের জন্য পরবর্তীতে ফিডব্যাক প্রদানের জন্য রুব্রিকের মাধ্যমে মূল্যায়ন অত্যন্ত কার্যকরি।

অতীতে গণিত মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কোন একটি ভুলের জন্য পুরো নম্বর কেটে দেওয়া হতো বা কোনো নম্বরই প্রদান করা হতো না। ফলে পুরো নম্বরই কাটা যেত। পরবর্তিতে শিক্ষার্থীদের গাণিতিক দক্ষতা অর্জনের কথা বিবেচনা করে সমস্যা সমাধানের প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে সমাধানের জন্য নম্বর প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়।

রুব্রিকের মাধ্যমে মূল্যায়ন স্কেলে নম্বর প্রদানের জন্য সমাধান কী রকম হবে তার সুস্পষ্ট বর্ণনা থাকে ফলে এর মাধ্যমে মূল্যায়ন সঠিক ও ফলপ্রসূ হয়। এক্ষেত্রে নম্বর প্রদানের কারণ সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা যায় এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা সহজ হয়।

গণিত শিখন মূল্যায়ন রুব্রিক-এর ব্যবহার:

  • ক্যাটাগরি অনুসারে প্রতিটি স্কোরের নিচে প্রদত্ত ব্যাখ্যা মনোযোগ সহকারে পড়া,
  • সমস্যা সমাধানের প্রতিটি ধাপ সতর্কতার সাথে যাচাই করে রুব্রিকের বর্ণনার সাথে মিল রেখে নম্বর প্রদান করা,
  • প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে রুব্রিকটির স্কোর আরো ক্ষুদ্র অংশে বিভাজন করে মূল্যায়ন কার্যক্রমকে আরও বেশি পরিমাণে নিঁখুত করা।

৫. মূল্যায়নকারীগণের জন্য রুব্রিকের মাধ্যমে মূল্যায়নের সাধারণ নির্দেশনাসমূহ উল্লেখ করুন।

সাধারণ নির্দেশনা:

১. উত্তরপত্র মূল্যায়নের পূর্বে মূল্যায়নকারী অবশ্যই প্রদত্ত রুব্রিকের মাধ্যমে মূল্যায়ন কৌশল মনযোগ সহকারে পড়বেন। সেইসাথে নিজস্ব মেধা, প্রজ্ঞা, বুদ্ধি ও বিবেক খাটিয়ে প্রশ্নের চাহিদা ও নম্বরের আলোকে নিজেই রুব্রিক মূল্যায়ন টুলস তৈরি করবেন।

২. নিজের তৈরিকৃত মূল্যায়ন টুলস নিয়ে সহকর্মী ও পরে প্রধান শিক্ষকের সাথে মত বিনিময় করবেন।

৩. রুব্রিক মূল্যায়ন ছক প্রস্তুত করার সময় প্রদত্ত প্রশ্নে আলোকে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিকল্প উত্তর বিবেচনা করবেন।

৪. রুব্রিক মূল্যায়ন ছকে হাতের লেখা ভাল-মন্দের জন্য কোনো নম্বর প্রদানের সুযোগ রাখা যাবে না।

৫. রুব্রিকের মাধ্যমে গণিতের মূল্যায়নে বানান ভুলের বিষয়টি বিবেচনা করা যাবে না তবে বানান ভুলের কারণে ভিন্নরূপ অর্থ প্রকাশ পেলে তা বিবেচনা করতে হবে।

৬. গাণিতিক সমস্যা সমাধানে পাঠ্যপুস্তকের উদাহরণ এবং পাঠ্যপুস্তকের বাইরের যুক্তিসঙ্গত ও গ্রহণযোগ্য উপায়ে সঠিক সমস্যা সমাধান বিবেচনা করে মূল্যায়ন করতে হবে।

৭. পরীক্ষার্থীর কোনো প্রশ্নের মূল্যায়নে রুব্রিকের মাধ্যমে সর্বনিম্ন নম্বর প্রদান করার পূর্বে ভালোভাবে চিন্তা করতে হবে।

৮. মূল্যায়নের সময় কোনরূপ কাটাকাটি কিংবা ঘষা-মাজা কিংবা ওভার রাইটিং করা যাবে না। প্রদত্ত মূল্যায়ন কোন কারণে সংশোধন করার প্রয়োজন হলে একটানে কেটে দিয়ে পরিবর্তিত মূল্যায়ন করতে হবে এবং পাশে অনুস্বাক্ষর করতে হবে।

৯. উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য লাল কালির কলম ব্যবহার করতে হবে।

১০. কোনো অস্পষ্টতা বা মূল্যায়ন সম্পর্কিত যে কোনো জটিলতার জন্য প্রধান শিক্ষক অথবা অভিজ্ঞ শিক্ষকের সাথে আলোচনাক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

3Jul2020

অধ্যায়-০৭: গণিত শিখন মূল্যায়ন

পাঠ-৭.২: ধারাবাহিক ও সামষ্টিক মূল্যায়ন পদ্ধতি ও উপকরণ

১. ধারাবাহিক বা গাঠনিক মূল্যায়ন কী?

২. সামষ্টিক মূল্যায়ন কী?

৩. ধারাবাহিক ও সামষ্টিক মূল্যায়নের বিভিন্ন কৌশল ব্যাখ্যা করুন।

১. ধারাবাহিক বা গাঠনিক মূল্যায়ন কী?

ধারাবাহিক/গাঠনিক মূল্যায়ন:

শিক্ষায় মূল্যায়ন হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধারাবাহিক বা গাঠনিক মূল্যায়ন শিখন শেখানো প্রক্রিয়ার নির্দেশনার একটি অংশ। বিদ্যালয়ে সারা বছরব্যাপী শিখন কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের শিখন অগ্রগতি এবং আচরণের নানামূখী বিকাশ সম্পর্কে জানার জন্য ধারাবাহিকভাবে মূল্য যাচাইয়ের প্রক্রিয়াকে ধারাবাহিক বা গাঠনিক মূল্যায়ন বলে। অন্য কথায়, পাঠ চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীর অর্জন ও অগ্রগতি যাচাই করাই হলো ধারাবাহিক বা গাঠনিক মূল্যায়ন। যেমন- পাঠ চলাকালীন প্রশ্ন করা, লিখিত বা মৌখিক অভীক্ষা, শ্রেণির কাজ, বাড়ির কাজ, কুইজ, চেক লিস্ট ইত্যাদি।

২. সামষ্টিক মূল্যায়ন কী?

সামষ্টিক মূল্যায়ন:

একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তে শিক্ষা প্রদানের পরে অর্জনের মাত্রা নির্ণয়ের লক্ষ্যে সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হয়। শিক্ষাবর্ষের শেষে বা মাঝামাঝিতে বা সাময়িক পাঠদান প্রক্রিয়া সমাপ্ত হওয়ার পর শিক্ষার্থী কী কী যোগ্যতা অর্জন করল তা যাচাইয়ের জন্য যে মূল্যায়ন করা হয় তাকে সামষ্টিক মূল্যায়ন বলে। অর্থাৎ সামষ্টিক মূল্যায়ন হলো সেমিস্টার বা সাময়িক পরীক্ষা বা বার্ষিক পরীক্ষা বা পাবলিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীর মুল্যায়ন। বছরের কোন নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব সম্পর্কে অবহিত করাই এ ধরনের মুল্যায়নের উদ্দেশ্য।

৩. ধারাবাহিক ও সামষ্টিক মূল্যায়নের বিভিন্ন কৌশল ব্যাখ্যা করুন।

ধারাবাহিক ও সামষ্টিক মূল্যায়নের জন্য বিভিন্ন ধরণের কৌশল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সুনির্দিষ্টভাবে গাঠনিক মূল্যায়নের পদ্ধতি থেকে সামষ্টিক মূল্যায়নের পদ্ধতি পৃথক করা যায় না। পরীক্ষা শুধুমাত্র সামষ্টিক মূল্যায়নের জন্য ব্যবহার করা হয় না গাঠনিক মূল্যায়নেও ব্যবহার করা হয় তবে সেক্ষেত্রে সময়মত ফিডব্যাক দেয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রধানত দু’ ধরনের পদ্ধতি লক্ষ্য করা যায়। তা হলো:

১. নির্বাচিত উত্তর হতে সঠিক উত্তর বাছাই পদ্ধতি এবং

২.  গঠনমূলক উত্তর প্রদান বা পারদর্শিতাভিত্তিক ও প্রক্রিয়া ভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি।

১. নির্বাচিত উত্তর হতে সঠিক উত্তর বাছাই পদ্ধতি:

  • বহু নির্বাচনী,
  • সত্য-মিথ্যা নির্ণয়,
  • মিল করা ইত্যাদি।

২. গঠনমূলক উত্তর প্রদান পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতেও বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন করা হয়। যেমন:

ক) সংক্ষিপ্ত গঠনমূলক উত্তর:

  • শূন্যস্থানপূরণ,
  • এক শব্দে উত্তর,
  • বাক্যাংশে বা একবাক্যে উত্তর,
  • সংক্ষিপ্ত উত্তর ইত্যাদি।

খ) পারদর্শিতাভিত্তিক মূল্যায়ন:

  • মৌখিক উপস্থাপনা,
  • প্রদর্শন করা,
  • প্রকল্প প্রস্তুত ও উপস্থাপন ইত্যাদি।

গ) প্রক্রিয়াকেন্দ্রিক মূল্যায়ন:

  • বিতর্ক,
  • কুইজ,
  • পর্যবেক্ষণ,
  • সাক্ষাৎকার,
  • পারস্পারিক মূল্যায়ন,
  • পোর্টফোলিও ইত্যাদি।
3Jul2020

অধ্যায়-০৭: গণিত শিখন মূল্যায়ন

পাঠ-৭.১: শিক্ষার্থীর শিখন মূল্যায়ন ক্ষেত্র

ক্লাসের আলোচ্য বিষয়:

১. মূল্যায়ন ক্ষেত্রের গাণিতিক ধারণা ব্যাখ্যা করুন।

২. প্রক্রিয়াগত ধারণা ও সমস্যা সমাধান এর মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করুন।

১. মূল্যায়ন ক্ষেত্রের গাণিতিক ধারণা ব্যাখ্যা করুন।

প্রাত্যাহিক জীবনে কোনো গাণিতিক সমস্যা কীভাবে সমাধান করতে হবে তা বুঝতে পারাই হলো শিক্ষার্থীদের গাণিতিক ধারণাগত জ্ঞান। অন্যভাবে বলা যায় যে, পূর্বে শেখা কোন গাণিতিক সংজ্ঞা, ঘটনা, প্রক্রিয়া, তত্ত্ব ইত্যাদি স্মরণ করার মানসিক প্রক্রিয়াই হলো গাণিতিক ধারণাগত জ্ঞান (MCK)।

যেমন- সনাক্ত করা, স্মরণ করা, পূনরায় করা, গণনা করা, তুলনা করা, পার্থক্য করা, সংখ্যার ছোটবড় চিনতে পারা, পূনঃউপস্থাপন করা, প্রতিলিপি করা ইত্যাদি।

উদাহরণ:

১. ০.১ × ০.১ = কত?

ক) ০.২ খ) ০.০১ গ) ০.০০১ ঘ) ১.০০

২. ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র কী?

২. প্রক্রিয়াগত ধারণা ও সমস্যা সমাধান এর মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করুন।

প্রক্রিয়াগত ধারণা (Procedural knowledge):

শ্রেণিতে শেখা গণিতের বিষয়বস্তু বা তথ্য-উপাত্ত উপলব্ধি করে দৈনন্দিন গাণিতিক প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া বা কৌশল ব্যবহার করতে পারাই হচ্ছে গণিতের প্রক্রিয়াগত ধারণা। অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে গাণিতিক সমস্যার সমাধানের কৌশল (কোনটি, কীভাবে করতে হবে তা) সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা। যেমন- স্বরূপ; বর্ণনা করা, ব্যাখ্য করা, পার্থক্য নির্ণয় করা, উদাহরণ দেয়া, শ্রেণিকরণ করা, উপযুক্তটি বেছে নেয়া ইত্যাদি।

উদাহরণ: ১০০ টাকা ১০০ টি লিচু কিনে ৫৫ টাকায় ৫০টি হিসেবে লিচু বিক্রয় করলে এতে শতকরা কত লাভ বা ক্ষতি হবে?

ক) ৫% লাভ খ) ১০% লাভ গ) ৫ % ক্ষতি ঘ) ১০% ক্ষতি

সমস্যা সমাধান (Problem solving):

শিক্ষার্থীদের গাণিতিক ধারণা ও প্রক্রিয়াগত ধারণা প্রয়োগের মাধ্যমে গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারা, বাস্তব জীবনের সাথে মিল করে গাণিতিক সমস্যা ক্সতরি করতে পারা এ স্তরের কাজ। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের গণিতের কোনো ধারণা, পদ্ধতি, সূত্র বা কোনো অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে বা নতুন পরিস্থিতিতে কাজে লাগানোর ক্ষমতাই হল সমস্যা সমাধান বা প্রয়োগ দক্ষতা। উদাহরণ স্বরূপ হিসাব-নিকাশ করা, উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করা, সম্পর্ক দেখানো, চিত্র অঙ্কন করা, সমস্যা সমাধান করা ইত্যাদি।

যেমন: একটি বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ৪৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জন ছাত্রী। ঐ শ্রেণিতে শতকরা কতজন ছাত্রী?

1Jul2020

অধ্যায়-০৬: গণিত শিক্ষোপকরণ

পাঠ-৬.২: গণিত শিক্ষায় আইসিটির ব্যবহার

ক্লাসের আলোচ্য বিষয়:

১. গণিত শিক্ষায় ডিজিটাল কনটেন্ট এর ধারণা ব্যাখ্যা করুন। গণিত বিষয় শিক্ষাদানে ডিজিটাল কনটেন্টের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করুন।

২. ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরিতে কী কী উপকরণ প্রয়োজন হয়?

৩. একটি ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ধাপ লিখুন।

৪. ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি ও ব্যবহারের বিবেচ্য দিকগুলো বর্ণনা করুন।

৫. গণিত বিষয় পাঠদানে আইসিটির সীমাবদ্ধতা লিখুন।

১. গণিত শিক্ষায় ডিজিটাল কনটেন্ট এর ধারণা ব্যাখ্যা করুন। গণিত বিষয় শিক্ষাদানে ডিজিটাল কনটেন্টের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করুন।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আইসিটি তথা প্রযুক্তি ব্যবহারের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। কেননা  তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ব্যবহারের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রমে ডিজিটাল কনটেন্ট প্রদর্শন করে গণিত শিক্ষায় সহজেই শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। ডিজিটাল কনটেন্ট হলো কম্পিউটার ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ব্যবহার করে পাওয়ারপয়েন্ট স্লাইড ব্যবহারের মাধ্যমে আকর্ষণীয় ও কার্যকরভাবে পাঠ উপস্থাপন।

ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে প্রচলিত শিক্ষা উপকরণের পাশাপাশি আইসিটি উপকরণের সমন্বয় করে পরিকল্পিতভাবে পাঠ উপস্থাপন করা যায়। মূলত: এটি অন্যান্য উপকরণের মতোই ডিজিটাল উপকরণ। এতে থাকে শিক্ষার্থীরা কী করবে তার নির্দেশনা; থাকে বিষয়কে সহজে উপস্থাপনের জন্য টেক্সট, চিত্র, এনিমেশন, ভিডিও ও অডিও। ডিজিটাল কনটেন্ট শিক্ষকের বিকল্প নয়; এটি শিখন-শেখানো কাজে শিক্ষকের সহায়ক মাত্র।

ডিজিটাল কনটেন্টের প্রয়োজনীয়তা:

  • গণিত বিষয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষণীয় বিভিন্ন বিষয়বস্তুকে শিক্ষার্থীদের নিকট আরও বোধগম্য, মূর্ত ও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা যায়।
  • পাঠদান কার্যক্রমকে প্রাণবন্ত এবং ফলপ্রসূ করা যায়।
  • বিমূর্ত বিষয়গুলোকে মূর্ত করে তোলা যায়।
  • বাস্তব চিত্র/ভিডিও দেখিয়ে এবং এনিমেশন ব্যবহার করে কঠিন বিষয়বস্তুকে সহজবোধ্য করা যায়।
  • প্রয়োজনীয় তথ্য, গ্রাফ, চিত্র খুব সহজে ব্যবহার করা যায় ফলে স্বল্প ও দ্রুততম সময়ে একক/জোড়ায়/দলীয় কাজ প্রদান করা যায়।
  • interactive ও collaborative শ্রেণি পরিবেশ তৈরি করা যায়।
  • অমনোযোগী ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের মনোযোগী করে তোলা যায়।
  • বড় শ্রেণিকক্ষকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  • একঘেয়েমী দূর করা যায়।
  • একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থীকে আকর্ষণীয়ভাবে মূল্যায়ন করা যায়।

২. ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরিতে কী কী উপকরণ প্রয়োজন হয়?

ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ:

  • কম্পিউটার/ল্যাপটপ
  • ইন্টারনেট সংযোগ যেমন- ওয়াইফাই অথবা মোবাইল ডাটা,
  • ভিডিও/অডিও ডাউনলোড সফ্‌টওয়্যার যেমন- Atube catcher
  • মাল্টিমিডিয়া প্লেয়ার, Windows Media Player, VLC media player ইত্যাদি,
  • ইন্টারনেট ব্রাউজার যেমন- Mozilla firefox, Google Chrome ইত্যাদি।

. একটি ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ধাপ লিখুন।

ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ধাপ:

ধাপ ১- কম্পিউটার বা ল্যাপটপে একটি ফোল্ডার খোলা,

ধাপ ২- এম এস পাওয়ার পয়েন্ট ফাইল খুলে ফোল্ডারে সেভ করা,

ধাপ ৩- প্রয়োজনীয় স্লাইড সংযোজন করা,

ধাপ ৪- স্লাইডে প্রয়োজনীয় টেক্সট লেখা,

ধাপ ৪- প্রয়োজনীয় শেপ আনা/ইনসার্ট করা,

ধাপ ৫- ইন্টারনেট থেকে চিত্র ডাউনলোড করা,

ধাপ ৬- চিত্র স্লাইডে নিয়ে আসা,

ধাপ ৭- ভিডিও ডাউনলোড করা,

ধাপ ৮- ভিডিও স্লাইডে সংযুক্ত করা,

ধাপ ৯- স্লাইড এনিমেশন দেয়া,

ধাপ ১০- সেভ করা।

. ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি ও ব্যবহারে বিবেচ্য দিকগুলো বর্ণনা করুন।

ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির বিবেচ্য:

  • ছবি/ভিডিও অবশ্যই বিষয় সংশ্লিষ্ট ও শিখনফলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
  • শিক্ষার্থীদের জীবন ঘনিষ্ঠ বা পরিচিত পরিবেশ প্রদর্শন করে এমন ছবি/ভিডিও হতে হবে।
  • রাষ্ট্রীয় আদর্শ, মূলনীতি, সামাজিক মূল্যবোধ, রীতি-নীতি, ধর্মীয়, রাজনৈতিক চেতনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
  • অপ্রয়োজনীয় ভিডিও/ছবি/অ্যানিমেশন ব্যবহার পরিহার করতে হবে।
  • পরিমিত এনিমেশন/ভিডিও/অডিও/চিত্র নির্বাচন করতে হবে।
  • উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী উপাদান (ছবি, ভিডিও, শব্দ/স্বর) টেক্সটের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি থাকতে হবে ।
  • ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা /হালকা রঙের রাখা ভাল তবে বিভিন্ন কালার ব্যবহার করলে সামঞ্জস্য রাখতে হবে। অহেতুক চাকচিক্য পরিহার করতে হবে।
  • টেক্সট-এর রঙ কালো/গাঢ় নীল রঙের হলে ভাল।
  • পেছনের বেঞ্চের শিক্ষার্থীরাও যাতে দেখতে পারে এরকম ফন্ট সাইজ নিতে হবে (৩৬+)
  • একটি স্লাইডে সাধারণত ৬ লাইনের বেশি লেখা পরিহার করতে হবে।
  • শিক্ষার্থীদের বয়স উপযোগী হবে।
  • শিক্ষার্থীদের অনুসন্ধিৎসু করার মতো হবে।

. গণিত বিষয় পাঠদানে আইসিটির সীমাবদ্ধতা লিখুন।

গণিত বিষয় পাঠদানে আইসিটির সীমাবদ্ধতা :

১. ডিজিটাল শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতা।

২. ইন্টারনেটের ধীরগতি ও উচ্চমূল্য বা সহজলভ্যতা।

৩. আইসিটি জ্ঞান প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক স্বল্পতা।

৪. পেডাগজির সাথে আইসিটির সমন্বয় ঘটাতে না পারা।

৫. ডিজিটাল কনটেন্ট এর উপর অধিক নির্ভরতা বা এর অতি ব্যবহার।

৬. ল্যাপটপ বা ডিজিটাল ডিভাইসের অপ্রতুলতায় (শিক্ষকদের নিজস্ব ডিভাইস না থাকা) নিয়মিত প্রযুক্তি ব্যবহার না থাকায় প্রযুক্তি ভীতি,

৭. কিছুক্ষেত্রে শিক্ষকদের ইতিবাচক মনোভাব না থাকা।

28Jun2020

অধ্যায়-০৬: গণিত শিক্ষোপকরণ

পাঠ-৬.১: গণিত শিক্ষোপকরণের ধারণা (প্রথম অংশ)

ক্লাসের আলোচ্য বিষয়:

১. শিক্ষোপকরণ বলতে কী বোঝায়?

২. শিক্ষোপকরণের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করুন।

৩. গণিত শিক্ষায় শিক্ষোপকরণের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করুন।

৪. গণিত শিক্ষোপকরণের বৈশিষ্ট্য কী?

৫. গণিত শিক্ষোপকরণের উপযোগিতা বিচারের বিবেচ্য দিকগুলো ব্যাখ্যা করুন।

৬. সহজলভ্য উপকরণ কী? সহজলভ্য স্থানীয় উপকরণের একটি তালিকা তৈরী করুন।

১. শিক্ষোপকরণ বলতে কী বোঝায়?

শিক্ষোপকরণ:

শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের জন্য বিষয়বস্তুগত জ্ঞান ছাড়া শিক্ষক অন্যান্য যে সকল জিনিস, বস্তু বা কৌশল ব্যবহার করেন যা শিক্ষাদানকে সহজবোধ্য, স্থায়ী ও আকর্ষণীয় করে তোলে, সেগুলোকে শিক্ষোপকরণ বলে। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে ব্যবহৃত সকল প্রকার উপাদানই হলো শিক্ষোপকরণশিক্ষোপকরণ ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হলো পাঠের জন্য উদ্দেশ্য অর্জন।

২. শিক্ষোপকরণের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করুন।

বিভিন্ন ধরণের শিক্ষোপকরণ রয়েছে। শিক্ষোপকরণের শ্রেণিবিভাগ নিয়ে শিক্ষাবিদগণের মধ্যে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার শিক্ষোপকরণ নিয়ে আলোচনা করা হলো:

দর্শনমূলক শিক্ষোপকরণ:

যেসব উপকরণ শিখনের বিষয়বস্তুকে দর্শনগ্রাহ্য করে তোলে অর্থাৎ আমাদের চোখ দিয়ে দেখতে পাই। যেমন- পোস্টার, ছবি, চার্ট, গ্লোব, বিভিন্ন মডেল, ম্যাপ, ম্যাগাজিন ,জার্নাল, বিভিন্ন প্রকার বোর্ড, পাঠ্যপুস্তক, পত্র-পত্রিকা, স্লাইড প্রজেক্টর, ওভারহেড প্রজেক্টর ইত্যাদি।

শ্রবণমূলক শিক্ষোপকরণ:

যেসব উপকরণ শিখনের বিষয়বস্তুকে শ্রবণযোগ্য করে অর্থাৎ আমরা কান দিয়ে শুনতে পাই সেগুলোই শ্রবণযোগ্য উপকরণ। যেমন-রেডিও, গ্রামোফোন, টেপরেকর্ডার, বিভিন্ন ধরনের বাস্তব বস্তু ও নমুনা, ছবি, মডেল, ফিল্মস্ট্রিপ ও স্লাইড প্রজেক্টর, ওভার হেড প্রজেক্টর, প্রাসঙ্গিক জিনিস- ফুল, বক্স, বোতল, পাতা, খবরের কাগজ, কম্পিউটার, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি।

শ্রবণ-দর্শনমূলক শিক্ষোপকরণ:

যে সমস্ত শিক্ষোপকরণ একই সাথে শোনা ও দেখা যায় তাকে শ্রবণ-দর্শন মূলক শিক্ষোপকরণ বলা হয়। যেমন- টেলিভিশন, কম্পিউটার, ডিভিডি, ভিসিআর, সবাক চলচ্চিত্র ইত্যাদি।

কল্পীত প্রতীকীমূলক শিক্ষোপকরণ:

যে সমস্ত শিক্ষোপকরণ চোখে দেখা যায় না- কিন্তু শিক্ষকের কথা শুনে উপলব্ধি করা যায় এবং পাঠদান কাজে সহায়তা করে তাকে কাল্পনিক বা বাচনিক শিক্ষোপকরণ বলে। যেমন- গল্প বলে বা বিভিন্ন ধরনের উপমা ও যুক্তি প্রদান করে পাঠদান করা, রূপকথা শোনানো, যুক্তি প্রদর্শন করা ইত্যাদি ।

প্রতীকীমূলক শিক্ষোপকরণ:  

পাঠ্যপুস্তকসহ শিক্ষাদানের জন্য মুদ্রিত হ্যান্ড-নোট, লিফলেট বা কোন নির্দেশনা- ইত্যাদি হচ্ছে প্রতীকী মূলক শিক্ষোপকরণ। এগুলো শিখন সামগ্রী নামেও পরিচিত। যেমন- গণিত সাময়িকী, গণিতের ইতিহাস সম্পর্কিত বই, গণিত বিষয়ক বুলেটিন, গণিত বা পরিসংখ্যান জাতীয় যে কোন সরকারী বা বেসরকারী পত্রিকা বুলেটিন ইত্যাদি।

অনুসন্ধানমূলক শিক্ষোপকরণ:

যেসব উপকরণ ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা অনুসন্ধানমূলক কার্য সম্পাদন করে থাকে এবং যা ব্যবহার করে তারা তাদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসা বা সমস্যার সমাধানে উপনীত হতে পারে তাকে অনুসন্ধানমূলক উপকরণ বলে। যেমন: এ্যাবাকাস, ফুট স্কেল, মিটার স্কেল, চাঁদা (কোণ মাপনী), স্লাইড রুল, ক্যালকুলেটর, জ্যামিতি বক্স।

৩. গণিত শিক্ষায় শিক্ষোপকরণের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করুন।

গণিত শিক্ষায় শিক্ষোপকরণের প্রয়োজনীয়তা বা উপযোগিতা :

  • শিক্ষার্থীদের পাঠের বাস্তবভিত্তিক ধারণা প্রদান করা।
  • বিষয়বস্তুর মূর্ত ধারণা দেওয়া যায় ফলে পাঠের শিখনফল অধিকতর ফলপ্রসু হয়।
  • শিক্ষার্থীদের অনুমান ও চিন্তা করার ক্ষমতা সম্প্রসারিত হয়।
  • পাঠ উপস্থাপনে বৈচিত্র্য আনা যায় ফলে এতে শিক্ষার্থীদের পাঠের প্রতি একঘেয়েমীও দূর হয়।
  • শিক্ষার্থীরা পাঠের প্রতি মনোযোগী ও উৎসাহী হয়ে ওঠে।
  • পাঠদানে সময় কম লাগে।
  • শিক্ষকের পাঠ উপস্থাপন সাবলীল, আকর্ষণীয় ও প্রাণবন্ত হয়।

৪. গণিত শিক্ষোপকরণের বৈশিষ্ট্য কী?

গণিত শিক্ষোপকরণের বৈশিষ্ট্য:

গণিত শিখন-শেখানো কাজে শিক্ষোপকরণের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সেকারণে পাঠ উপস্থাপনের জন্য উপকরণ নির্বাচন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে তার গুণগত ও প্রায়োগিক দিক সমূহ বিবেচনা খুবেই জরুরি। গুণগত দিক বিচারের ক্ষেত্রে উপকরণের তিনটি বৈশিষ্ট্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হয়। সেগুলো হলো:

(১) শিক্ষা উপকরণের উপযোগিতা,

(২) শিক্ষা উপকরণের নির্ভরযোগ্যতা, এবং

(৩) শিক্ষা উপকরণের সহজলভ্যতা।


৫. গণিত শিক্ষোপকরণের উপযোগিতা বিচারের বিবেচ্য দিকগুলো ব্যাখ্যা করুন।

গণিত শিক্ষোপকরণের উপযোগিতা বিচারের বিবেচ্য দিক:

  • বিষয় সম্পৃক্তি বা পাঠ সংশ্লিষ্ট হওয়া যেমন- ত্রিভুজ পড়াতে গিয়ে সেট স্কয়ার অনুরূপভাবে বৃত্ত আলোচনা করতে গিয়ে গোলাকার কোন বস্তুকে প্রদর্শন করা যেতে পারে।
  • নির্দিষ্ট শ্রেণির মান বিবেচনায় রাখা অর্থাৎ শিক্ষার্থীর স্তর ও বয়স উভয় বিষয়ই বিবেচনায় রাখা।
  • দর্শনযোগ্যতা অর্থাৎ উপকরণের আকার, রঙের ব্যবহার ইত্যাদি বিবেচনায় রাখা।
  • সময়োপযোগিতা অর্থাৎ পাঠের কোন পর্যায়ে কতটুকু সময় ধরে শিক্ষোপকরণটি ব্যবহার করতে হবে তা মাথায় রাখা।
  • অভিনবতা ও আকর্ষণীয়তা সৃষ্টি করা।
  • ব্যবহারিক উপযোগিতা থাকতে হবে। যেমন-যাতে শিক্ষার্থী বা শিক্ষক উপকরণ সহজেই ব্যবহার করতে পারে।

৬. সহজলভ্য উপকরণ কী? সহজলভ্য স্থানীয় উপকরণের একটি তালিকা তৈরী করুন।

সহজলভ্য উপকরণ:

যে সকল উপকরণ খুব সহজে স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা যায়, সেসকল উপকরণই হলো সহজলভ্য উপকরণ। এছাড়াও আমাদের চারপাশের পরিবেশে অসংখ্য দ্রব্যসামগ্রী, বাড়ীর অব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী একসাথে মিলেমিশে সহজে তৈরি করা যায় এমন সকল ধরণের উপকরণই হলো সহজলভ্য উপকরণ।  উপকরণের সহজলভ্যতা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে উপকরণ ব্যবহারে উৎসাহিত করে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলে এ জাতীয় উপকরণ প্রস্তুত করা যায় বলে এতে করে কোন বিষয় হাতে কলমে শেখার সুযোগ ঘটে।

সহজলভ্য স্থানীয় উপকরণ তালিকা:

  • ফুল,
  • পাতা,
  • বিভিন্ন
  • প্রকার ফলের বীজ,
  • ফেলে দেয়া বোতলের ছিপি,
  • কাঠের টুকরো,
  • পাটকাঠি ইত্যাদি।
28Jun2020

অধ্যায়-০৬: গণিত শিক্ষোপকরণ

পাঠ-৬.১: গণিত শিক্ষোপকরণের ধারণা (শেষ অংশ)

ক্লাসের আলোচ্য বিষয়:

৭. সংখ্যা ও সংখ্যা প্রক্রিয়া শেখানোর জন্য শিক্ষোপকরণ কী হতে পারে?

৮. বিভিন্ন প্রকার জ্যামিতিক ধারণা শেখানোর জন্য শিক্ষোপকরণ কী হতে পারে?

৯. বিভিন্ন প্রকার জ্যামিতিক ধারণার জন্য শিক্ষোপকরণ কী হতে পারে?

১০. বিভিন্ন প্রকার পরিমাপ শেখানোর জন্য শিক্ষোপকরণ কী হতে পারে?

১১. গণিত শিক্ষোপকরণ ব্যবহারের নীতিমালাসমূহের বর্ণনা দিন।

৭. সংখ্যা ও সংখ্যা প্রক্রিয়া শেখানোর জন্য শিক্ষোপকরণ কী হতে পারে?

সংখ্যা ও সংখ্যা প্রক্রিয়া শেখানোর জন্য শিক্ষোপকরণ:

  • গণনার বস্তু, মার্বেল, মাটির ক্সতরি বল, নুড়ি পাথরের টুকরো, পীচবোর্ড বা হার্ডবোর্ড কেঁটে তৈরি বিভিন্ন জ্যামিতিক ক্ষেত্র বা চিত্র বাঁশের কাঠের টুকরো, কাঠির বান্ডিল, স্কেল, পাতা ফুল, ফল ইত্যাদি।
  • এ্যাবাকাস, ক্যালকুলেটর।
  • বিভিন্ন আকারের (কাঠের) ঘনবস্তু, প্ল্যাইউড, তক্তা, হার্ডবোর্ড।
  • মিটার স্কেল, ওজন যন্ত্র, ফুট স্কেল ইত্যাদি।

৮. বিভিন্ন প্রকার জ্যামিতিক ধারণা শেখানোর জন্য শিক্ষোপকরণ কী হতে পারে?

সাধারণ ও দশমিক ভগ্নাংশ শেখানোর জন্য শিক্ষোপকরণ:

  • পোস্টার বা কাগজে অঙ্কিত বিভিন্ন ভগ্নাংশের চার্ট।
  • ফুট স্কেল, মিটার স্কেল (দশমাংশ দাগাঙ্কিত)।
  • ফ্লানেল বোর্ড বা ফ্লানেল কাপড়ের সুবিধাজনক টুকরো।
  • পীচ বা কাঠের কাটা বৃত্ত, চতুর্ভুজ, আয়তক্ষেত্র ইত্যাদি যাতে অর্ধাংশ, এক তৃতীয়াংশ ইত্যাদি।

৯. বিভিন্ন প্রকার জ্যামিতিক ধারণার জন্য শিক্ষোপকরণ কী হতে পারে?

বিভিন্ন প্রকার জ্যামিতিক ধারণার জন্য শিক্ষোপকরণ:

  • ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্ত ইত্যাদি তৈরির জন্য দড়ি বা কাঠি।
  • হার্ডবোর্ড বা কাগজের তৈরি ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, ইত্যাদি জ্যামিতিক ক্ষেত্র।
  • কাঠ বা কাগজের তৈরি বিভিন্ন আকৃতির ঘনবস্তুর মডেল।
  • জ্যামিতি বক্স, ড্রয়িং বোর্ড।
  • জ্যামিতিক চিত্রের চার্ট।
  • গ্রাফ বোর্ড।

১০. বিভিন্ন প্রকার পরিমাপ শেখানোর জন্য শিক্ষোপকরণ কী হতে পারে?

বিভিন্ন প্রকার পরিমাপের জন্য শিক্ষোপকরণ:

  • দৈর্ঘ্য পরিমাপের উপকরণ: মিটার স্কেল, ফুট স্কেল, গজ ফিতা, টেপ।
  • ওজন পরিমাপের উপকরণ: পাল্লা, বাটখাড়া, নিক্তি।
  • তরল পদার্থ পরিমাপের উপকরণ: ১ লিটার, ১ গ্যালন আয়তন বিশিষ্ট পাত্র।
  • সময় পরিমাপের উপকরণ: ঘড়ি, পঞ্জিকা।
  • ক্ষেত্রফল পরিমাপের জন্য পীচ বোর্ডের তৈরি ১ ইঞ্চি, এক বর্গফুট, ১ বর্গসেন্টিমিটার বিশিষ্ট ক্ষেত্র।
  • ঘনক: ১ ঘন ইঞ্চি, ১ ঘন সেন্টিমিটার, ১ ঘন ফুট ইত্যাদি পরিমাপের কাঠের বা কাগজের তৈরি ঘনক।
  • মুদ্রা: বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা (দেশীয় ও বিভিন্ন দেশের)
  • তাপমাত্রা পরিমাপের যন্ত্রাদি।

১১. গণিত শিক্ষোপকরণ ব্যবহারের নীতিমালাসমূহের বর্ণনা দিন।

গণিত শিক্ষোপকরণ ব্যবহারের নীতিমালা:

১। উপকরণ নির্বাচন হতে হবে বিষয় সংশ্লিষ্ট;

২। উপকরণ ব্যবহার কৌশল শিক্ষককে যথাযথ ভাবে রপ্ত করতে হবে;

৩। শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের পূর্বেই শিক্ষককে উপকরণ ব্যবহার সম্পর্কে ভাল ভাবে জানতে হবে;

৪। শ্রেণিকক্ষে উপকরণ ব্যবহারের পূর্বে শিক্ষর্থীদের প্রস্তুত করা প্রয়োজন;

৫। শ্রেণিকক্ষে উপকরণ ব্যবহারের বাহ্যিক পরিবেশ থাকা প্রয়োজন;

৬। উপকরণ ব্যবহরের পূর্বে এর উপযোগিতা যাচাই করা প্রয়োজন;

৭। উপকরণ শ্রেণীকক্ষের এমন জায়গায় প্রদর্শন করা প্রয়োজন যাতে সকল শিক্ষার্থী তা সমানভাবে দেখতে পায়।

বাড়ীর কাজ:

১. শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের গুরুত্ব লিখুন।

২. শিক্ষা উপকরণ সংরক্ষণের গুরুত্ব লিখুন।

৩. গণিত শিক্ষণ শিখনে ব্যবহার উপযোগি একটি শিক্ষা উপকরণ তালিকা তৈরি করুন।

23Jun2020

অধ্যায়-০৫: গণিত শিক্ষাদান পদ্ধতি

পাঠ-৫.২: আবিষ্কার পদ্ধতি (Heuristic Method)

ক্লাসের আলোচ্য বিষয়:

১. আবিষ্কার পদ্ধতি উদাহরনসহ ব্যাখ্যা করুন।

২. গণিত শিক্ষাদানে আবিষ্কার পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা করুন।

১. আবিষ্কার পদ্ধতি কাকে বলে?

আবিষ্কার বা Heuristic কথাটি এসেছে গ্রীক শব্দ থেকে। শব্দটির অর্থ হল আমি আবিষ্কার করি (I find out)। এই কথাটির মধ্যেই আবিষ্কার পদ্ধতির অর্থ নিহিত রয়েছে। যে কোন কার্যকর পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা নিজেরা আবিষ্কার করে বলেই এই পদ্ধতিকে আবিষ্কার পদ্ধতি বলা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের নিজেদের সমাধান খুঁজে বের করতে দেওয়া হয় এবং শিক্ষার্থীকে এ কাজে নিয়োজিত থেকে তথ্য সংগ্রহ করা, সমস্যা সমাধানের জন্য হাইপোথেসিস নির্ধারণ করতে হয়।

আবিষ্কার পদ্ধতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল শিক্ষার্থীকে কোন কিছু বলে দেওয়া হবে না, সে নিজে তার প্রতি ও আগ্রহ অনুযায়ী সমস্যা নির্বাচন করবে ও তার সমাধান করবে। তবে শিক্ষকও নিষ্ক্রিয় থাকবেন না বরং তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে এমন একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করবেন যাতে শিক্ষার্থীরা  নিজেরাই স্বতঃস্ফুর্তভাবে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে উৎসাহিত হবে, উপযুক্ত নিয়ম ও সূত্র ব্যবহার করে সমস্যা সমাধান করবে।

এই পদ্ধতি বেশ সময় সাপেক্ষ বলে বর্তমানে এই পদ্ধতির কিছুটা সংশোধন করে নির্দেশ অনুসারে আবিষ্কার  পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

২. গণিত শিক্ষাদানে আবিষ্কার পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা করুন।

আবিষ্কার পদ্ধতির সুবিধাঃ

১. আবিষ্কার পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা নিজেরা আবিষ্কারক হিসাবে স্বাধীনভাবে চিন্তা করার মাধ্যমে চিন্তার বিকাশ ঘটানোর সুযোগ পায়।

২. হাতে কলমে কাজ করে বলে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করার ফলে কাজের প্রতি আগ্রহ জন্মায়।

৩. আত্মনির্ভরশীলতার মনোভাব গঠন, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, মনোযোগ বৃদ্ধি এবং শিখন স্থায়ী হয়।

৪. শিক্ষার্থীরা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আনন্দদায়ক পরিবেশে শেখার ফলে পাঠ্য বিষয় সহজেই মনে রাখতে সক্ষম হয়।

৫. নিজের গতিতে ভুল ও সংশোধনের মাধ্যমে শেখে তাই বিষয়বস্তুর গভীরতা উপলব্ধি করতে পারে।

৬. পারস্পারিক সহযোগিতায় শ্রেণিকক্ষে কাজ চলে বলে তাদের মাঝে একটা হৃদ্যতা গড়ে ওঠে ফলে সামাজিক গুণাবলী বিকশিত হয়।

৭. দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা সমাধানে আত্মপ্রত্যয়ী হয়।

আবিষ্কার পদ্ধতির অসুবিধাঃ

১. এই পদ্ধতির বড় অসুবিধা হল তাত্ত্বিক দিক থেকে এটা সম্ভব হলেও বাস্তবে তা কার্যকর করা খুব বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়।

২. ঠিকমত অনুসরণ করতে না পারলে এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা কিছু শিখতে পারে না ফলে হতাশ হয়ে পড়তে পারে।

৩. শিক্ষার্থীর শিখন ভিন্নতার কারণে সাধারণ শ্রেণিকক্ষে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা যায় না।

৪. অত্যন্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের প্রয়োজন হয়।

৫. এই পদ্ধতি ঠিকমত অনুসরণ করতে না পারলে শিখতে তো পারবেই না বরং সময়ের অপচয় ঘটে।

৬. এই পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয় বহুল। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য অনেক উপকরণ ও যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়।

23Jun2020

অধ্যায়-০৫: গণিত শিক্ষাদান পদ্ধতি

পাঠ-৫.১: আরোহী ও অবরোহী পদ্ধতি

ক্লাসের আলোচ্য বিষয়:

১. শিক্ষাদান পদ্ধতি কাকে বলে?

২. উদাহরণসহ আরোহী ও অবরোহী পদ্ধতি ব্যাখ্যা করুন।

৩. আরোহী ও অবরোহী পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা উল্লেখ করুন।

৪. অবরোহী পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধাগুলো লিখুন।

৫. শিক্ষক হিসেবে আরোহী ও অবরোহী তুলনামূলক পর্যালোচনা করুন।

১. শিক্ষাদান পদ্ধতি কাকে বলে?

শ্রেণিকক্ষে শিখন শেখানো কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য শিক্ষক যে সকল কৌশল বা পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন তাকেই সাধারণত যেভাবে কোন বিষয় শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা হয় তাকে শিক্ষাদান পদ্ধতি বলে। এটি এক ধরণের একটি আর্ট এবং পদ্ধতি হচ্ছে এই আর্ট এর সাহায্যে লক্ষ্যে পৌঁছার উপায়। একইভাবে শিক্ষার্থীদের গণিতের বিষয়বস্তু বুঝতে, মনে রাখতে এবং ব্যবহার করতে সাহায্য করা হয় তাকেই গণিত শিক্ষাদান পদ্ধতি বলে।

২. উদাহরণসহ আরোহী ও অবরোহী পদ্ধতি ব্যাখ্যা করুন।

বিশেষ দৃষ্টান্ত থেকে সাধারণ সিদ্ধান্তে উপণিত হওয়াকেই আরোহী পদ্ধতি বলে। আরোহী পদ্ধতির ঠিক উল্টোটি হচ্ছে অবরোহী পদ্ধতি। অর্থাৎ একটি সাধারণ সত্যকে স্বীকার করে নিয়ে যখন বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে উহার সত্যতা প্রমাণ করা হয় তখন তাকে অবরোহী পদ্ধতি বলে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি সাধারণ সত্যকে বা তথ্যকে স্বীকার করে নিতে হয়, এরপর বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তাদের সত্যতা প্রমাণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়:

উদাহরণ: ৭% হারে ৮০০ টাকার ৫ বছরের মুনাফা কত?

সমাধান :

১০০ টাকার ১ বছরের মুনাফা ৭ টাকা

১ টাকার ১ বছরের মুনাফা ৭ টাকা

৮০০ টাকার ১ বছরের মুনাফা ৭ টাকা

১০০ টাকার ৫ বছরের মুনাফা ৭ টাকা

যদি , আসল = ৮০০ টাকা, সময় = ৫ বছর, মুনাফার হার = ৭ টাকা, তাহলে মুনাফা নির্ণয়ের সূত্র হবে:

মুনাফা = আসল *মুনাফার হার * সময় /১০০

উল্লেখিত উদাহরণে প্রথমে একটি বিশেষ সত্যকে বা তথ্যকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে (১০০ টাকার ১ বছরের মুনাফা ৭ টাকা) এরপর এর একক নির্ণয় করে সাধারণ সিদ্ধান্তে উপণিত হতে হয়েছে। অর্থাৎ বিশেষ দৃষ্টান্ত থেকে সাধারণ সিদ্ধান্তে উপণিত হওয়াকেই আরোহী পদ্ধতি বলে। আরোহী পদ্ধতির ঠিক উল্টোটি হচ্ছে অবরোহী পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি সাধারণ সত্যকে বা তথ্যকে স্বীকার করে নিতে হয়, এরপর বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তাদের সত্যতা প্রমাণ করা হয়। উল্লেখিত উদাহরণ থেকে প্রাপ্ত সাধারণ সত্য হিসেবে স্বীকার করে নিলে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তাদের সত্যতা প্রমাণ করা যাবে।

এবার আরো একটি উদাহরণের মাধ্যমে আরোহী পদ্ধতির অর্থ আরও একটু ব্যাখ্যা করা যাক।

৪ একটি জোড় সংখ্যা এবং এটি ২ দ্বারা বিভাজ্য

৬ একটি জোড় সংখ্যা এবং এটি ২ দ্বারা বিভাজ্য

১২ একটি জোড় সংখ্যা এবং এটি ২ দ্বারা বিভাজ্য

১২০ একটি জোড় সংখ্যা এবং এটি ২ দ্বারা বিভাজ্য

অতএব যে কোন জোড় সংখ্যা ২ দ্বারা বিভাজ্য। উল্লেখ্য যে এখানে প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র আরোহী পদ্ধতিতেই পাওয়া যায়, তা নয় ঐ সিদ্ধান্ত যে․ক্তিক পদ্ধতিতেও পাওয়া যায় বলেই তা অকাট্য। জোড় সংখ্যার সংজ্ঞা হলো যে তা দুই দ্বারা বিভাজ্য।

প্রমাণ কর যে কোন জোড় সংখ্যা দুই দ্বারা বিভাজ্য

প্রমাণ:

সংখ্যা শ্রেণি দশ-ভিত্তিক বলে দশক, শতক, হাজার ইত্যাদি স্থানীয় সংখ্যাগুলো অবশ্যই ২ দ্বারা বিভাজ্য হবে, কারণ তারা ১০ এর গুণিতক। অতএব একক স্থানীয় অঙ্ক ২ দ্বারা বিভাজ্য হলে যে কোন সংখ্যা ২ দ্বারা বিভাজ্য বা জোড় সংখ্যা হবে।

৩. আরোহী পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা উল্লেখ করুন।

আরোহী পদ্ধতির সুবিধা:

১. এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীকে প্রথম বাস্তবভিত্তিক তথ্যের মাধ্যমে শেখান হয় ফলে শিক্ষার্থী বিষয়টি বুঝে নেবার যথেষ্ট সুযোগ পায়।

২. শিক্ষার্থীরা এই পদ্ধতিতে সমস্যা সমাধানে ‘কেন ও কিভাবে’ এসব প্রশ্নের জবাব পেতে পারে।

৩. শিক্ষার্থীরা পাঠদানকার্যে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে বলে তাদের মানসিক ক্ষমতার উন্নতি হয়।

৪. মুখস্থকরণ ও বাড়ির কাজের বেশি চাপ থাকে না।

আরোহী পদ্ধতির অসুবিধা:

১. এই পদ্ধতিতে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হলেই তাকে সব সময় সত্য বলা যায় না- সম্ভবনার প্রশ্ন রয়ে যায়।

২. পদ্ধতিটি দীর্ঘ এবং ক্লান্তিকর।

৩. অনুশীলনের জন্য প্রদ্ধতিটি যথোপযুক্ত নয়। সময়ের অপচয় ঘটে।

৪. অবরোহী পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধাগুলো লিখুন।

অবরোহী পদ্ধতির সুবিধা:

১. পূর্বের প্রমাণিত সত্য সূত্র বা নিয়ম বলে ব্যবহৃত হয়, ফলে প্রমাণের আর প্রয়োজন হয় না।

২. গণিত বিষয়ে অনুশীলনের জন্য পদ্ধতিটি কার্যকর।

৩. সূত্র প্রয়োগ করে অতি সংক্ষেপে যুক্তির মাধ্যমে ধাপে ধাপে সমস্যা সমাধানে অগ্রসর হওয়া যায়।

অবরোহী পদ্ধতির অসুবিধা:

১. এই পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত থেকে পাঠ শুরু হয় বলে শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছার প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত হতে পারে না।

২. শুধু মুখস্ত করে খুব বেশি কিছু শিখতে গেলে শিক্ষার্থীদের স্মৃতি শক্তির উপর বেশি চাপ পড়ে।

৫. শিক্ষক হিসাবে আরোহ ও অবরোহী তুলনামূলক পর্যালোচনা করুন।

ভিন্ন ভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে যখন কোন সাধারণ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় তখন তাকে আরোহী পদ্ধতি বলে। একটি সাধারণ সত্যকে স্বীকার করে নিয়ে যখন বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে উহার সত্যতা প্রমাণ করা হয় তখন তাকে অবরোহী পদ্ধতি বলে। একজন শিক্ষক হিসাবে গণিত শিক্ষাদান পদ্ধতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক। গণিত শিক্ষায় আরোহী ও অবরোহী উভয় প্রকার পদ্ধতিই ব্যবহার করার প্রয়োজন রয়েছে। উভয় পদ্ধতিই কার্যকরী হবে যদি শিক্ষক প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিকভাবে পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

নিম্নে আরোহ ও অবরোহী পদ্ধতির তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হলো:

  • কোন নতুন গাণিতিক নিয়ম বোঝাবার জন্য আরোহী পদ্ধতি অনুসরণ করাই শ্রেয়। কেননা এই পদ্ধতিতে অধিক ব্যাখ্যা সহকারে শিক্ষার্থীদের গাণিতিক তথ্য, প্রক্রিয়া, সূত্র বা সিদ্ধান্ত বোঝানো হয় ।
  • আপাত দৃষ্টিতে অবরোহী পদ্ধতিতে সমস্যা সমাধান সহজতর মনে হলেও বুঝে অঙ্কটি করার জন্য এ পদ্ধতি মোটেই ঠিক পদ্ধতি নয়। তবে সূত্রটি একবার বুঝে গেলে পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য অবরোহী পদ্ধতি অবলম্বন করাই শ্রেয়।

Ad

error: Content is protected !!